সনাতন ধর্মে নরকের বর্ননা Part-1

ভূমিকা

“নরক”হলো এক পারলৌকিক স্থান। যেখানে পাপাত্মা  মৃত্যুর পর তার সমস্ত কু-কর্মের শাস্তি প্রদান করা হয়।এই “নরক” মৃত্যুর দেবতা “সূর্য পুত্র” ” যম ” দ্বারা পরিচালিত হয়।এবং তাঁর সহায়ক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন”চিত্রগুপ্ত” যিনি পাপাত্মার সমস্ত পাপ কর্মের হিসেবে রাখেন।পাপি  আত্মা দের তাদের পাপ কর্ম অনুযায়ী বিবিধ ভয়ানক শাস্তি প্রদান করা হয়।এবং পুনরায়” নব দেহ” প্রদান করে “৮৪লক্ষ যোনী “তে প্রেরণ করা হয়।

মৃতুর পর আত্মার গতি

মানুষের মৃতুর পর তাঁর আত্মার তিন প্রকারের গতি হয়ে থেকে সেগুলি হলো – “অর্চি মার্গ”  ,”ধুম মার্গ”, ” বিনাশ মার্গ “

অর্চি মার্গ

যে ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সম্পূর্ণ নিষ্কাম কর্মের দ্বারা ভগবান ও জীবজগতের সেবা করেছেন। এবং সাত্ত্বিক জীবনযাপন করছেন । মৃত্যুর পর সেই ব্যক্তির আত্মা “অর্চি মার্গ” অর্থাৎ ভগবানের ধামে  ভগবানের দূত দ্বারা সসম্মানে প্রস্থান করেন। এবং তাঁর মোক্ষ লাভ হয়।

ধুম মার্গ

গরুড় পূরণ অনুসারে জীবাত্মার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় গতি হলো  “ধুম মার্গ”।যে ব্যক্তি জীবদ্দশায় সকাম কর্ম করেছেন। অর্থাৎ কর্ম করে ফলের আশা করেছেন।এবং ভগবানের থেকে সংসার কে বেশি প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন মোহ,মায়া, তে আবৃত থেকে রাজসিক জীবনযাপন করেছেন, মৃত্যুর পর সেই ব্যক্তির আত্মা “ধুম মার্গ ” অর্থাৎ “পিতৃ লোকে” গমন করেন।এবং পুনরায় কর্মফল লাভের আশায় মানব জন্ম লাভ করে।

বিনাশ মার্গ

গরুড় পূরণ অনুসারে জীবাত্মার মৃত্যুর পর তৃতীয় গতি হলো “বিনাশ মার্গ”।এবং সবথেকে ভয়ানক পথ।যে ব্যক্তি জীবদ্দশায় শুধুমাত্র “পাপ কার্য” করেছে।এবং তামসিক জীবন যাপন করেছে সেই ব্যক্তির আত্মা মৃত্যুর পর ভয়ানক যমদূত দ্বারা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ভাবে “বিনাশ মার্গ” অর্থাৎ “যম লোকে” (নরক )গমন করে।

নরকের অবস্থান

সনাতন শাস্ত্রে “গরুড় পূরণ” অনুযায়ী পৃথিবী থেকে নরকের দূরত্ব”৮৬,০০০ হাজার যোজন” যা কিলোমিটার হিসেবে ১১,৮৮,০০০কিলোমিটার।  পূরণ অনুযায়ী পৃথিবীর দক্ষিণ দিকে”পাতাল লোক” ও” গর্ভদক ” সাগরের মধ্যবর্তী স্থানে নরকের অবস্থান উল্লেখিত হয়েছে।আত্মার কর্ম অনুযায়ী তাদের শাস্তির বর্ণনা উল্লেখিত হয়েছে “ভগবত পূরণের” পঞ্চম খন্ডে।

নরকের বিস্তারিত তথ্য

নরক হল “পূরণে “উল্লেখ্য একটি জগৎ, এবং এমন এক জায়গা যেখানে আত্মাদের তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য পাঠানো হয়।এবং “যম দেব” তাদের কর্ম অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করে।শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, তারা পৃথিবীতে মানুষ বা পশুদেহে পুনর্জন্ম লাভ করে।অতএব, নরক চিরস্থায়ী শাস্তির আবাস নয়।  

 তবে “ঋগ্বেদের” মতো প্রাথমিক গ্রন্থে নরকের সম্বন্ধে বিস্তারিত  কোনো তথ্য নেই।এখানে শুধু মাত্র বলা হয়েছে-“এটি কেবল মন্দ স্থান এবং একটি অন্ধকার অতল গর্ত”। “অথর্ববেদ” নরককে অন্ধকারের একটি ক্ষেত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে, “যেখানে হত্যাকারীরা মৃত্যুর পর বন্দী থাকে”।আবার উপনিষদের সংক্ষিপ্তসার এবং “ভগবদ্গীতায়” নরকের কথা বেশ কয়েকবার উল্লেখ করা হয়েছে।

মহাকাব্য গুলি তে  নরক সর্ম্পকে ব্যাক্ষা করা হয়েছে যে -“নরক এক ভয়ানক গভীর ও অন্ধকার জঙ্গলের  মতো” ।যেখানে জল নেই এবং বিশ্রাম নেই। যমদূতরা তাদের প্রভুর আদেশে আত্মাকে তার কর্ম অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করে।

আত্মার নরক যাত্রা

মৃতুর পর পাপাত্মার নরক গমন পর্যন্ত আত্মার সাথে ঠিক কি কি ঘটে, ” গরুড় পূরণে” এর বিস্তারিত তথ্য জানা যায়।  “গরুড় পূরণ” অনুযায়ী মৃত্যুর পর  পাপাত্মা কে পৃথিবী থেকে নরক পর্যন্ত গমন করতে মোট “৪৭ দিন”  সময় লাগে।পূরণে এই “৪৭ দিন” কে “ভয়ংকর”বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে  প্রত্যেক পাপী আত্মাকেএই ৪৭দিন  চূড়ান্ত কষ্ট ভোগ করে যমলোকে পৌঁছতে হয়। যখন কোনো ব্যক্তির মহাপ্রস্থানের সময় হয়, তখন তিনি সর্ব প্রথম বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেন। এবং সেই মুহূর্তে ২ জন “যমদূত” তার নিকট উপস্থিত হয়। যমদূতের দর্শন মাত্র আত্মা শরীর থেকে বেরিয়ে আসে।এবং সাথে সাথেই  “যমদূত”  সেই আত্মাকে যমপাশ দিয়ে  আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলে। এর পর ১৩ দিন পর  সেই আত্মার “পারলৌকিক ক্রিয়া”(অন্তেষ্টিক্রিয়া, ক্ষৌর কর্ম, শ্রাদ্ধ শান্তি, পিণ্ড দান,ব্রাহ্মণ ভোজন)সম্পূর্ণ হওয়ার পর যমদূতেরা আত্মাকে যমলোকে নিয়ে যায়। পুরাণ অনুসারে”যমলোক” গমনের সময় কঠোর “যমদূত” সেই আত্মাকে টেনে হিঁচড়ে একপ্রকার মারতে  মারতে যমলোকে নিয়ে যায়।

নরকের সংখ্যা

হিন্দু গ্রন্থে অনেক নরকের নাম প্রচলিত আছে। “ভাগবত পুরাণ” এবং “দেবী ভাগবত পুরাণ”  ও  “গরুড় পূরণ” অনুযায়ী নরকের সংখ্যা মোট ২৮ টি। মৃত্যুর দেবতা “যম” ও তাঁর পার্ষদ ভয়ানক “যমদূত “দ্বারা পরিচালিত এই ২৮ টি নরকে পাপাত্মা দের তাদের পাপ কর্ম অনুযায়ী বিবিধ প্রকার শাস্তি প্রদান করা হয়।

২৮ টি নরকের নাম

(১)তামিস্র,(২)অন্ধতামিস্র,(৩)রৌরব,(৪)মহারৌরব,(৫)কুম্ভীপাক,(৬)কালসূত্র,(৭)অসিপত্রবন,(৮)সূকরমুখ,(৯)অন্ধকূপ,(১০)কৃমিভোজন,(১১)সন্দংশ,(১২)তপ্তসূর্মি,(১৩)বজ্রকণ্ট-শাল্মলী,(১৪)বৈতরণী,(১৫)পূয়োদ,(১৬)প্রাণরোধ,(১৭)বিশসন,(১৮)লালাভক্ষ,(১৯)সারমেয়াদন,(২০)অবীচিমৎ,(২১)অয়ঃপান,(২২)ক্ষারকর্দম,(২৩)রক্ষোগণ ভোজন,(২৪)শূলপ্রোত,(২৫)দন্দশূক,(২৬)অবটনিরোধন, (২৭)পর্যাবর্তন, (২৮)সূচীমুখ,(২)অন্ধতামিস্র,(৩)রৌরব,(৪)মহারৌরব,(৫)কুম্ভীপাক,(৬)কালসূত্র,(৭)অসিপত্রবন,(৮)সূকরমুখ,(৯)অন্ধকূপ,(১০)কৃমিভোজন,(১১)সন্দংশ,(১২)তপ্তসূর্মি,(১৩)বজ্রকণ্ট-শাল্মলী,(১৪)বৈতরণী,(১৫)পূয়োদ,(১৬)প্রাণরোধ,(১৭)বিশসন,(১৮)লালাভক্ষ,(১৯)সারমেয়াদন,(২০)অবীচিমৎ,(২১)অয়ঃপান,(২২)ক্ষারকর্দম,(২৩)রক্ষোগণ ভোজন,(২৪)শূলপ্রোত,(২৫)দন্দশূক,(২৬)অবটনিরোধন, (২৭)পর্যাবর্তন, (২৮)সূচীমুখ

নরকের শাস্তির বর্ননা

“হিন্দু পূরাণ” মতে ২৮ রকমের নরকে পাপাত্মা দের তাদের জীবৎকালীন বিভিন্ন  পাপ কার্যের শাস্তি প্রদান করা হয়। শাস্তির পূর্বে প্রত্যেক পাপাত্মা দের এক বিশেষ শরীর প্রদান করা হয়।যেই শরীর দ্বারা সে জীবদ্দশার মতো সমস্ত কষ্ট কষ্ট অনুভব করতে সক্ষম হবে, কিন্তু সেই দেহের শত ছিন্ন হলেও জীবের মৃত্যু হবে না ।পাপাত্মা দের কৃত পাপ কর্ম অনুযায়ী যম রাজ দ্বারা প্রদত্ব শাস্তির বর্ননা নিম্ন রূপ —

(১) তামিস্র

যে ব্যক্তি তার  জীবদ্দশায় অপরের ধন , অপরের স্ত্রী ও সন্তান হরণ করে, ভয়ঙ্কর যমদূতেরা তাকে কালপাশে বেঁধে বলপূর্বক তামিস্র নরকে নিক্ষেপ করে। এই তামিস্র নরক ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন, সেখানে যমদূতেরা পাপীকে ভীষণভাবে প্রহার, তাড়ন এবং তর্জন করে। সেখানে খাদ্য বা জল কিছুই দেওয়া হয় না। এইভাবে নির্দয় যমদূতদের দ্বারা শাস্তি ভোগ করতে করতে জীবাত্মা ঘন ঘন মূর্ছিত হতে থাকে।এই শাস্তি  পাপাত্মার কর্ম অনুযায়ী ,কয়েকশো বছর বা হাজার বছর পর্যন্ত চলতে থাকে।

(২) অন্ধতামিস্র

যে ব্যক্তি তার  জীবদ্দশায় “মিত্র” (বন্ধু) স্ত্রী গামী হয়, ভয়ানক “যম দূতেরা” তাকে “অন্ধতামিস্র “নরকে নিক্ষেপ করে। বৃক্ষকে ভূমিতে পতিত করার আগে যেমন তার  শাখা প্রশাখা ও মূল ছেদন করা হয়। তেমনি “অন্ধতামিস্র”নরকে পতিত পাপাত্মা কে বৃক্ষের ন্যায় বিভিন্নভাবে খন্ডিত করে ভয়ানক যমদূতেরা।

(৩) রৌরব

যে ব্যক্তি তার  জীবদ্দশায়, দেহাভিমানের বসে অন্য ব্যক্তি কে তুচ্ছ জ্ঞান করে। পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন পোষণের জন্য , খুন,ডাকাতি, রাহাজানি, বল পূর্বক পরস্রী হরণ ও সম্ভোগ করে।এবং সাধু ও ধর্মাত্মা দের বিনাশ করে, মৃত্যুর পর সেই ব্যক্তির আত্মা “রৌরব” নরকে নিক্ষেপ করা হয়। ইহ জীবনে যে হিংসা-পরায়ণ ব্যক্তি অন্য প্রাণীদের যন্ত্রণা দেয়, মৃত্যুর পর যখন সে তার কৃত কর্মের ফলে, সর্পের ন্যায় ক্রুড় প্রাণী দের দ্বারা অত্যন্ত ভয়ানক যন্ত্রণা শাস্তি লাভ করে কয়েকশো হাজার বছর ধরে।

(৪) মহা রৌরব

যে ব্যক্তি তার  জীবদ্দশায়,অন্য জীবে দের কষ্ট দিয়ে নিজের দেহ ধারণ করে, ধর্মাত্মা দের ধর্ম কার্যে  বাধা দেয় তাঁদের বিভিন্ন বস্তু বল পূর্বক হরণ করে, মৃত্যুর পর সেই ব্যক্তির আত্মা কে” মহা রৌরব ” নরকে নিপতিত করা হয়।এবং ভয়ানক যমদূত তে রা ওই ব্যক্তির শরীর কেটে তার  মাংস তাকেই ভক্ষন করায়। এই প্রক্রিয়া কয়েকশ হাজার বছর ধরে চলতে থাকে।

(৫) কুম্ভীপাক

যে ব্যাক্তি তার জীবদ্দশায়, শুধু মাত্র দেহ ধারণ ও জিহ্বার তৃপ্তি সাধনের জন্য, নিরীহ পশু-পক্ষীকে  কঠোর ভাবে হত্যাকরে ,তাদের রন্ধন ও ভক্ষণ করে। এবং বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থের অযথা নিন্দা করে।মৃত্যুর পর সেই ব্যক্তির আত্মা কে “কুম্ভিপাক”  নামক নরকে নিপতিত করা হয়। সেখানে “কাল রূপী” যমদূতেরা তাকে ফুটন্ত তেলে পাক করে কয়েক কল্প যাবৎ।

(৬) কালসূত্র

যে ব্যাক্তি তার জীবদ্দশায় নিজের মাতা-পিতা কে অপশব্দ বলে , কটূ বচন দেয়, প্রহার করে,নিজের গুরুজন দের অপমান করে , শাস্ত্র ও  বেদের নিন্দা করে, বৈষ্ণব দ্রোহ করে। মৃতুর পর সেই ব্যাক্তিকে কালসূত্র নরকে নিক্ষেপ করা হয়।যার পরিধি ৮০,০০০ মাইল এবং যা তাম্রনির্মিত। নীচ থেকে অগ্নি এবং উপর থেকে প্রখর সূর্যের তাপে সেই তাম্রময় ভূমি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়। সেই ব্যক্তি ওই স্থানে সর্বদা দগ্ধ হতে থাকে। প্রবল ক্ষুদার্থ ,তৃষ্ণার্ত অবস্থায় সে কখনও শয়ন করে, কখনও উপবেশন করে, কখনও উঠে দাঁড়ায় এবং কখনও প্রচণ্ড কষ্টে ছুটাছুটি করে। এইভাবে ওই  ব্যক্তির শরীরে যত লোম রয়েছে, তত হাজার বছর ধরে তাকে যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়।

(৭) অসিপত্রবন

যে ব্যাক্তি জীবিত অবস্থায় সংকট কালে নিজ ধর্ম ( বেদমার্গ) পরিত্যাগ করে ওপর ধর্ম(পাষণ্ড, অসৎ) অবলম্বন করে, এবং অসৎ ক্রিয়া কর্ম করে। মৃত্যুর পর “যমদূত” সেই ব্যক্তি কে অসিপত্রবন নরকে নিক্ষেপ করে।এবং “যমদূতেরা” তাকে প্রতিনিয়ত বেত্রাঘাত করতে থাকে।প্রহারের যন্ত্রণার সে কাতর হয়ে ওঠে। এই নরকের বৃক্ষের পত্র গুলি “অসি” বা “তরোয়াল” এর মত ধারালো। সেই পত্রের দ্বারা সেই ব্যক্তির সর্বাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে। সেই ব্যক্তি ক্রমশ আর্তনাদ করতে করতে মূর্ছিত হতে থাকে। এই শাস্তি কয়েক হাজার বছর ধরে চলতে থাকে।

(৮) সূকরমুখ

ইহ জগতে যে” ক্ষমতাধর ব্যক্তি” (রাজা, মন্ত্রী, উকিল, ব্যারিস্টার, পুলিশ) বা “রাজ পুরুষ” নিজ স্বার্থে , ক্ষমতার দম্ভে,বা অর্থের লোভে কোনো অসহায়, দরিদ্র বা নিরপরাধ ব্যক্তিকে বিনা দোষে দোষী সাব্যস্ত করে ,ও দন্ড প্রদান করে। মৃত্যুর পর ওই ব্যক্তিকে “যমদূতেরা” “সূকরমুখ” নরকে  নিক্ষেপ করে। বলদ দ্বারা ইক্ষুকে যেমন নিষ্পেষণ করে তার রস নির্গত করা হয়। ঠিক তেমনি কোঠর “যমদূতেরা” ওই ব্যক্তিকে ক্রমাগত নিষ্পেষণ করে। ওই ব্যক্তির প্রবল যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে। এই শাস্তি কয়েক হাজার বছর ধরে চলতে থাকে।

Please Click On সনাতন ধর্মে নরকের বর্ননা Part-II

Leave a Comment