“ব্রহ্ম পূরণ” অনুযায়ী আত্মা ৮৪ লক্ষ দেহে বিচরণ করে মানব দেহ লাভ করে। জীবাত্মা তার শুভ- অশুভ কর্মের ফল ভোগ করে তার নানা জন্মে, নানা দেহে।
কখন বৃক্ষ রূপে,কখনো কীট আবার কখনো পশু পাখী রূপে। অবশেষে ভগবানের কৃপা দৃষ্টির মাধ্যমে জীবাত্মা মানব শরীর লাভ করে।
একমাত্র মানব যোনী হল কর্ম যোনী।আর অন্য সমস্ত যোনী হল ভোগ যোনী।কারণ একমাত্র মানব শরীরেই জীব নতুন শুভ কর্ম করতে পারে। ৮৪ লাখ জীবের মধ্যে শুধু মানুষেই চেতনা,বিবেক, শুভ অশুভ কর্মের জ্ঞান থাকে। মানুষই এক মাত্র নতুন শুভ কর্ম এবং ভগবানের শরণাগত লাভ করে, নিজেকে পরমাত্মার মধ্যে বিলীন করার মাধ্যমে মোক্ষ লাভ করতে সমর্থ হয়। ফলে তাকে এই পূনরায় জন্ম ও মৃত্যুর চক্রে পড়তে হয় না।
*জীবাত্মা কী* জীবাত্মা সাধারণ অর্থে এমন এক সত্ত্বাকে বোঝানো হয়, যারা অদৃশ্য এবং জীবের শরীরের ভিতরে বা স্বাধীনভাবে বসবাস করে।”আত্মা ” কোন জীবের অংশ যা কোন শরীর নয়। “আত্মা” যতক্ষণ জীবের দেহে বিচরণ করে ততক্ষণ জীব জীবিত থাকে।”আত্মা”দেহ থেকে বেরিয়ে গেলে জীবের মৃত্যু ঘটে।সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী একটি ছোট্ট কিটের মধ্যে যে “আত্মা” থাকে সেই একই আত্মা মানুষের মধ্যে থাকে।শুধু মাত্র কর্মফল ভোগ করার জন্য বিভিন্ন আত্মা কে বিভিন্ন জীবের দেহ প্রদান করা হয়।
আর্থাৎ আজ যে পশু ,পাখী,বা কীট দেহে অবস্থান করছে সেই “জীব” পূর্বে র কোন জন্মে মানুষ দেহে বাস করতো।সেই অর্থে আজ যারা মনুষ্য দেহে বিচরণ করছে,সেই সমস্ত “জীব “পূর্বে পশু,পাখী , কীট, মৎস্য ইত্যাদি দেহে অবস্থান করছে।এবং পরবর্তী তে ও কর্ম অনুযায়ী বিভিন্ন জীবদেহ লাভ করবে।” আত্মা ” অবিনাশী আত্মাকে কোন ভাবেই নষ্ট করা যায় না।শ্রী কৃষ্ণের মুখ নি:সৃত বাণী শ্রীমৎ ভগবৎ গীতার ” সাংখ্য যোগ” থেকে আত্মার বিভিন্ন স্থিতির কথা জানা যায়।যেমন –
““বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়
নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরাণি ।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্য-
ন্যানি সংযাতি নবানি দেহী”” ॥২২॥
““বাসাংসি, জীর্ণানি, যথা, বিহায়,
নবানি, গৃহ্ণাতি, নরঃ, অপরাণি,
তথা, শরীরাণি, বিহায়, জীর্ণানি,
অন্যানি, সংযাতি, নবানি, দেহী”” ॥২২॥
অনুবাদ :
মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, দেহীও তেমনই জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করেন।
““নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ ।
ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ”” ॥২৩॥
“”ন, এনম্, ছিন্দন্তি, শস্ত্রাণি, ন, এনম্, দহতি, পাবকঃ,
ন, চ, এনম্, ক্লেদয়ন্তি, আপঃ, ন, শোষয়তি, মারুতঃ”” ॥২৩॥
অনুবাদ :
আত্মাকে অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না, আগুনে পোড়ান যায় না, জলে ভেজানো যায় না, অথবা হাওয়াতে শুকানোও যায় না।
“”অচ্ছেদ্যোহয়মদাহ্যোহয়মক্লেদ্যোহশোষ্য এব চ ।
নিত্যঃ সর্বগতঃ স্থাণুরচলোহয়ং সনাতনঃ”” ॥২৪॥
অনুবাদ:
এই আত্মা অব্যক্ত, অচিন্ত্য ও অবিকারী বলে শাস্ত্রে উক্ত হয়েছে।
**আত্মার ৮৪ লক্ষ যোনী* ৮৪ লক্ষ জন্ম একটি ‘পৌরাণিক প্রকৃত মূলক সংখ্যা’। একটি জীব ৮৪লক্ষ বার জন্মের পরেই মানব জন্ম পায়। মানব জন্মের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ মানব কুল পাওয়া অত্যন্ত দুর্লভ।
অর্থাৎ জীব ৩০,০০,০০০ বৃক্ষকুল, ৯,০০,০০০ জলচর কুল, ১০,০০,০০০ কীট কুল, ১১,০০,০০০পক্ষিকুল,২০,০০,০০০ পশুকুল
৪,০০,০০০ মানবকুল (বিভিন্ন জাতী ও বিভিন্ন বর্ণ বিশেষের মানুষ)= ৮৪,০০,০০০ জনম।
মানব কুলে জন্মেও জীব যদি শুভ কর্ম, সাধন, ভজন ইত্যাদি ক্রিয়া র মাধ্যমে পরমাত্মার স্মরণগতি লাভ ও মোক্ষ লাভ না করে। পূর্বের ন্যায় পাপাচরণে লিপ্ত হয় তাহলে তার চরম দুর্গতি হয়।তাকে আবার কর্ম অনুযায়ী ৮৪লক্ষ যোনীর পাকে পড়তে হয় এবং কর্মফল ভোগ করতে হয়।